×
অস্টিওপরোসিসঃআমার_মায়ের_নীরব_ঘাতক!!

অস্টিওপরোসিসঃ আমার মায়ের নীরব ঘাতক!


আমার বয়স যখন বারো বছর আমার মায়ের বয়স তখন পঁয়তাল্লিশ(৪৫)। চার ভাই -বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। যখন বুঝতে শুরু করলাম তখন দেখছি মা দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। পঞ্চাশ বছর বয়সে  পিঠে ব্যথা শুরু হল। ৫৫/৫৬ বছর বয়সে সামান্য একটু পড়ে গিয়ে বাম হাতের হাড়( রেডিয়াস)টা ভেঙে ফেলেন যাকে মেডিকেলের ভাষায় কোলিস্ ফ্রাকচার(Colles fracture) বলে।  উনার বয়স যখন ষাট/একষট্টি ,দেখতে পেলাম উনি কুজো হয়ে যাচ্ছেন। একটা সময় আমাদের ছেড়ে চলেই গেলেন! 

পড়াশোনা শেষে এ পর্যায়ে এসে মনে প্রশ্ন জাগে

১) মায়ের রোগটা কি ছিলো?

২) কেন পিঠে ব্যথা হতো?

৩) সামান্য একটু পড়ে যাওয়ায় কেন হাতের কব্জির হাড় ভেঙে গেল?

৪) কুজো হয়ে যাওয়ার কারণ কি?

৫) আমরা কি পারতাম না মাকে যথাযথ চিকিৎসা করাতে?

আসুন একটু জেনে নেই এ প্রশ্নগুলোর উত্তর। আর তাতে আপনি হয়তো রক্ষা করতে পারবেন আপনার মাকে এই বয়সে সামান্য আঘাতে হাড় ভাঙা থেকে,ষাটোর্ধ বয়সে কোমর সোজা করে হাটতে।


# ১) আমার মায়ের রোগটার নাম ছিলো অস্টিওপরোসিস। 

অস্টিওপরোসিস তাহলে কি? অস্টিওপরোসিস হল শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া(Abnormal low bone mass) তারসাথে হাড়ের ভিতরের গঠনের পরিবর্তন হওয়া(disruption of microarchitecture)।


#২) এ রোগটি প্রধানত বয়সের সাথে সম্পৃক্ত।মহিলাদের সবচেয়ে বেশি হয়। আমাদের দেশের চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের প্রায় ৪১% অস্টিওপরোসিস রোগে ভুগে থাকেন (সূত্রঃআইইডিসিআর,বাংলাদেশ)। বয়স যখন বাড়তে থাকে সংখ্যাটা আরো বাড়ে।পঞ্চাশের ঘরে যখন বয়স যায় তখন প্রতি ২ জনে ১ জন এ রুগে ভুগে।

অধিকাংশ রুগীরই কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না।তবে অনেকের কোমড় ব্যথা দিয়ে শুরু হয়।একটু গুরুতর হয়ে গেলে অল্প আঘাতেই  শরীরের হাড় ভেঙে যায়।আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে হাতের কব্জির হাড়(রেডিয়াস) ভাঙে বেশি ।বয়স বাড়লে মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙে ( Compression fracture of vertibrae), যা শুধুই কুজো হয়ে যাওয়া আমরা দেখি,এমনকি অনেক সময় ব্যথাও থাকেনা। মাটিতে পড়ে যেয়ে যখন উরুর হাড় ভাঙে তখন বুঝতে হবে বড় দেরি হয়ে গেছে অস্টিওপরোসিসকে চিনতে।


#৩) অস্টিওপরোসিসকে কম থাকতেই চেনা প্রয়োজন।আর তা চিনতে পারলে সহজেই প্রতিরোধ করা যায় এমনকি ফ্রাকচার ও রোধ করা সম্ভব। একে চেনার গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট হল DXA scan যা আমাদের দেশে BMD(  Bone mineral density) টেস্ট নামে অধিক পরিচিত।


#৪) এর প্রথমতঃ চিকিৎসা হল প্রতিরোধ। প্রতিরোধ করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।নিয়মিত ব্যায়াম,সুষম খাবার, খাবারে থাকা  পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি৩ এ রোগকে প্রতিরোধে সক্ষম।ধুমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। যাদের খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি৩  নিশ্চিত না করা যায় বিশেষ করে বাড়ন্ত  বয়সে( Growing age) এবং মহিলাদের চল্লিশোর্ধ্ব (Postmenopausal)বয়সে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দিতে হয়।

 

#৫) BMD পরীক্ষায় যাদের টি স্কোর ২.৫ এর নীচে হবে তাদের ক্ষেত্রে কুজো হওয়া ও হাড় ভাঙার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।তাই তাদেরকে কিছু ঔষধ সেবন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বছরে একটা ইনজেকশন ( জোলেনড্রনিক অ্যাসিড) জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।এছাড়া মাসে বা সপ্তাহে একটা ট্যাবলেট(ওরাল বিসফস্ফোনেট) মুখেও খাওয়া যায়।


গত ২০ ই অক্টোবর ছিলো বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস।যার প্রতিপাদ্য বিষয়  ছিলো হাড়ের যত্ন সুরক্ষিত করবে আপনার ভবিষ্যৎ জীবন। 

আসুন আমরা নিজের হাড়ের যত্ন নেই, আমাদের মা ও বাবার হাড়ের যত্ন নেই। 


























---

ডা.আবদুল কাদির নোমান 

অর্থোপেডিক ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ 

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল