ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগটি কি?
ফাইব্রোমায়ালজিয়া এমন একটি রোগ যেখানে রুগীর শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে পিঠ ও কোমড়ের মাংপেশিতে দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাথা অনুভত হয়।
এই রোগটিতে আক্রান্ত রুগীর সংখ্যা কেমন?
ফাইব্রোমায়ালজিয়া একটি খুবই সাধারণ (common) রোগ। ২-৪ শতাংশ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই রোগটি অনেক বেশি হয়ে থাকে।
কাদের ও কোন বয়সী রুগীদের এটি হয়?
ফাইব্রোমায়ালজিয়া মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলেও, এটি পুরুষদের হতে পারে। এটি প্রায়শই মাঝ বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়, তবে কিশোর বয়সে এবং বৃদ্ধ বয়সে ঘটতে পারে।
এই রোগটি কেন হয়?
ফাইব্রোমায়ালজিয়ার কারণগুলি অস্পষ্ট। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় স্নায়ুতন্ত্রের সাথে এই রোগের সম্পর্ক প্রমানিত হয়েছে, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের।
নিম্নোক্ত বিষয়গুলি সাধারণত ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগের প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করে-
1. কোন মারাত্মক দূর্ঘটনা (যেমন, নিকট আত্নিয়ের পরলোকগমন),
2. পারিবারিক সমস্যা ও দুশ্চিন্তা (যেমন, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ বা বিচ্ছেদ),
3. অতিরিক্ত মানসিকি ও শারিরীক চাপ (যেমন, মহিলাদের সন্তান প্রসবের পর)
এই রোগে আক্রান্ত রুগীর ব্যাথার সংবেদনশীলতা অনেক বেড়ে যায়। এর মানে অল্প মাত্রার ব্যাথাতে রুগী অনেক বেশি অনুভব করে।

যদিও এই রোগে আক্রান্ত রুগীদের ব্যাথা জনিত কষ্টের কারনে জীবনমানে অনেক প্রভাব ফেলে কিন্তু এটিকে একটি কম ক্ষতিকারক (benign) রোগ হিসাবেই মনে করা হয়। এর কারনে শরীরের কোন অঙ্গ বা organ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; স্ট্রোক, হার্ট এটাক, ক্যান্সার, বিকলাঙ্গতা বা মৃত্যু হয় না। তাই দুশ্চিন্তার কোন কারন নেই।

যদি আপনার শরীরের নিম্নোক্ত স্থানে বিশেষ করে পিঠ ও কোমড়ে ৩ মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যাথা অনুভত হয় ও চাপ দিলে ব্যাথা করে (tender point) এবং এর কারন হিসাবে চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেও কোন বিশেষ রোগ বা অঙ্গের সমস্যা খোজে না পান, তাহলে আপনার ফাইব্রোমায়ালজিয়া হয়ে থাকতে পারে।
এই রুগের আক্রান্ত রুগীদের আরো প্রধান ৩ টি লক্ষন থাকে
১) অতিরিক্ত ক্লান্তি বা কাজ করতে ভাল না লাগা (easy fatigability),
২) সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ভাল না লাগা, দুর্বল লাগা, হাত পা পিঠ জমে আছে মনে হওয়া (waking unrefreshed),
৩) কোন কিছু মনে না থাকা, চিন্তা ও আচরনগত সমস্যা ( congnitive problems)
এছাড়া এসব রুগীর নিম্নোক্ত লক্ষনগুলিও থাকতে পারে:
1. পেট ব্যাথা
2. পাতলা পায়খানা অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য
3. মাথা ব্যাথা, চোয়াল ব্যাথা
4. বমি বমি ভাব
5. ঘুম কম হওয়া
6. মন খারাপ থাকা
7. শুষ্ক ঠুট মুখ
8. ক্ষুধামন্দা
9. ঘন ঘন প্রশ্রাব
10. অন্য যেকোন শারিরীক ও মানসিক সমস্যা এর সাথে থাকতে পারে।
এই রোগ সনাক্ত করতে কোন পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। তবে আপনার চিকিৎসক ফাইব্রোমায়ালজিয়া এর লক্ষন এর সাথে মিল রয়েছে এমন অন্য কোন রোগ হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকতে পারে, যেমন, রক্তের কিছু পরীক্ষা, বাত ও ইমিউনোলজিক্যাল কিছু পরীক্ষা, এক্সরে ও এম আর আই ইত্যাদি। ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগীদের এসকল পরীক্ষা সাধারণত নরমাল থাকে।

যদিও এটি একটি কম ক্ষতিকর কারক রোগ কিন্তু এটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময়ের জন্যে চিকিৎসা এখনো নেই। তবে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে এই রোগ খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এই রোগের চিকিৎসায় ঔষধের থেকে জীবনধারা(lifestyle) এর ভূমিকাই মূখ্য। এই রোগের চিকিৎসায় রোগী এবং এর অভিভাবকরা যদি সক্রিয় ভূমিকা না রাখেন তাহলে একটার পর একটা ঔষধ বা চিকিৎসক পরিবর্তন করেও কোন লাভ নেই।



কিছু কিছু ঔষধ যেমন, প্রেগাবালিন, মিলনাসেপ্রিন, এমিট্রিপ্টাইলিন ইত্যাদি আপনার চিকিৎসক দিয়ে থাকতে পারেন। সাধারণত এইসব ঔষধ রুগীদের দীর্ঘ মেয়াদে গ্রহন করতে হয়। ঔষধের কিছু কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া প্রথম দিকে দেখা দিলেও ধীরে ধীরে এগুলি কমতে থাকে (যেমন, বেশি বেশি ঘুম আসা, মাথা ভারী ভারী লাগা/মাথা ঘোরানো, চোখে ঝাপসা দেখা, মুখ ও জিহবা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি)। তবে, যেকোন বিরুপ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলে সাথে সাথেই আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন।

হ্যাঁ আছে। এরকম ক্ষেত্রে আমরা আপনাকে ৫-৭ দিন হাসপাতালে ভর্তি রেখে কিটামিন নামক এক প্রকার ব্যাথার ঔষধ খুব কম মাত্রায় সেবন করে থাকি। পাশাপাশি এক্সপার্ট সাইকিয়াট্রিস্ট বা মানসিক বিশেষজ্ঞ দ্বারা কাউন্সিলিং ও CBT নামে এক প্রকার সাইকথেরাপী, বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি সমন্বয়ে আপনাকে চিকিৎসা প্রদান করা হতে পারে।

১) প্রতিদিন বিশ্রাম ও উপভোগ করার জন্য সময় বের করুন। টানা কাজ করা পরিহার করুন। কিছুক্ষন কাজ করার পর পর বিরতি নিন।
২) গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। আর মানসিক চাপ কমাতে না পারলে এই রোগের লক্ষনও কমবে না। নিয়মিত ধর্মকর্মও যেমন, নামাজ আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম:
প্রাকৃতিক খোলামেলা পরিবেশে আসন করে বসুন, পিঠ এবং গাড় সোজা করে মাথা নাক বরাবর রেখে বুক টান টান করে বসুন। এবার ধীরে ধীরে একবার লম্বা শ্বাস নিন এবং তা একই ভাবে প্রশ্বাসে বের করে দিন, এভাবে পর পর চার বার করুন। এর পর স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নিন আবার একই ভাবে প্রতিদিন ২০ বার করতে থাকুন।
৩) নিয়মিত ঘুমের রুটিন সেট করুন। প্রতিদিন একই সময়ে বিছানায় যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীরকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও, দিনের বেলা ঘুমানো এড়িয়ে চলুন এবং ক্যাফেইন গ্রহণ সীমিত করুন, যা ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে। নিকোটিন একটি উদ্দীপক, তাই যেসকল ফাইব্রোমায়ালজিয়া রোগীদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদের ধূমপান বন্ধ করা উচিত।
৪) প্রায়ই ব্যায়াম করুন। এটি ফাইব্রোমায়ালজিয়া চিকিৎসার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রথমে কঠিন হলেও, নিয়মিত ব্যায়াম প্রায়ই ব্যথার উপসর্গ এবং ক্লান্তি কমায়। ব্যায়ামের ক্ষেত্রে রোগীদের এই কথাটি অনুসরণ করা উচিত, "start low, go slow." ধীরে ধীরে আপনার রুটিনে প্রতিদিনের ফিটনেস যোগ করুন। উদাহরণস্বরূপ, লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি নিন বা আপনি গন্তব্যের একটু আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়ুন। ওষুধের সেবনের সাথে সাথে যখনই আপনার লক্ষণগুলি কমতে শুরু করবে, সাথে সাথে আপনার কার্যকলাপ (activity) ও ব্যায়ামের মাত্রা বাড়াতে শুরু করুন। অল্প অল্প করে হাঁটা, সাঁতার কাটা, এয়ারোবিক্স (aerobics) অথবা স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ যোগ করুন এবং আপনার ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গগুলির কারণে আপনি যে কাজগুলি করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন তা করা শুরু করুন। একটি আরামদায়ক সুন্দর রুটিন তৈরি করতে সময় লাগে। শুধু চালিয়ে যান, সক্রিয় থাকুন এবং কিছুতেই হাল ছেড়ে দেবেন না!
৫) নিজে এই রোগ সম্পর্কে জানুন। এবং আপনার পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের সাথে এই তথ্য শেয়ার করুন। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আপনি এই দীর্ঘ যাত্রা পাড়ি দিতে পারবেন না।
৬) সামনের দিকে তাকান, পিছনে নয়। যে সমস্যা আপনার অসুস্থতার কারণ তার দিকে নয়, বরং ভাল হওয়ার জন্য আপনাকে কী করতে হবে তার উপর ফোকাস করুন।

Contact us at 01841-960102
ReplyForward